ইসলামের দৃষ্টিতে মুনাফাখোরী, মজুদদারী ও পণ্যে ভেজাল
50.00৳
পৃথিবীতে জীবনধারণের জন্য মানুষ নানাবিধ পেশা বা বৃত্তি অবলম্বন করে। পেশার এই ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহ প্রদত্ত ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন,نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُوْنَ- ‘আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি তাদের পার্থিব জীবনে এবং তাদেরকে একে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করি। যাতে তারা একে অপর থেকে কাজ নিতে পারে। বস্ত্ততঃ তারা যা কিছু জমা করে তা থেকে তোমার প্রতিপালকের রহমত অনেক উত্তম’ (যুখরুফ ৪৩/৩২)।
এ বিশ্বচরাচরে যত রকমের পেশা আছে তন্মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশা। ইসলামে ব্যবসার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেও নবুঅতপূর্ব সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। তিনি খাদীজা (রাঃ)-এর অর্থ দিয়ে ‘মুযারাবা’ পদ্ধতিতে ব্যবসা করে প্রচুর লাভ করেছিলেন।[1] তবে ব্যবসা হতে হবে হালাল পন্থায়, হারাম পন্থায় নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَأَجْمِلُوا فِى الطَّلَبِ خُذُوا مَا حَلَّ وَدَعُوا مَا حَرُمَ ‘জীবিকা অন্বেষণে উত্তম পন্থা অবলম্বন কর। যা হালাল তা গ্রহণ কর এবং যা হারাম তা পরিহার কর’।[2] কারণ হালাল রূযী ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত।[3] এজন্য হাদীছ ও ফিক্বহের গ্রন্থগুলিতে ‘কিতাবুল বুয়ূ’ শিরোনামে ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতিমালা বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। ইসলামে সূদের আদান-প্রদান, মুনাফাখোরী, মজুদদারী, ফটকাবাজারী, কালোবাজারী, পণ্যে ভেজাল সহ অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনের যাবতীয় পথ ও পদ্ধতি হারাম করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে হালাল রূযী ভক্ষণের নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং হারাম থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। যেমন তিনি বলেন,
১. يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ ‘হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
২. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি, সেখান থেকে পবিত্র বস্ত্ত সমূহ ভক্ষণ কর। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই দাসত্ব করে থাক’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)।
৩. فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَتَ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ ‘অতএব আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তার মধ্যে বৈধ ও পবিত্র খাদ্য তোমরা ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদতকারী হয়ে থাক’ (নাহল ১৬/১১৪)।
৪. ‘নিশ্চয়ই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমরা তোমাদেরকে তাদের থেকে বিশুদ্ধ দুধ পান করাই যা পানকারীদের জন্য অতীব উপাদেয়। যা নিঃসৃত হয় উক্ত পশুর উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হ’তে। আর খেজুর ও আঙ্গুর গাছের ফল সমূহ থেকে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য’ (নাহল ১৬/৬৬-৬৭)।
৫. إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘তিনি তোমাদের উপর নিষিদ্ধ করেছেন মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গীত প্রাণী। তবে যে ব্যক্তি বাধ্য হয় এবং বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘনকারী না হয়, তার জন্য তা ভক্ষণে কোন পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/১৭৩)।
৬. يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ ‘যিনি তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ দেন ও অন্যায় থেকে নিষেধ করেন। যিনি তাদের জন্য পবিত্র বিষয় সমূহ হালাল করেন ও নাপাক বিষয় সমূহ নিষিদ্ধ করেন’ (আ‘রাফ ৭/১৫৭)।
[1]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৩য় মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারী ২০১৬), পৃঃ ৭৬।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২১৪৪; মিশকাত হা/৫৩০০।
[3]. মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০।
Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.
General Inquiries
There are no inquiries yet.
Reviews
There are no reviews yet.